শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
রূপালী স্বাস্থ্য।।
মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ কী? মানবমূত্রের উৎপাদন, সংরক্ষণ ও নিঃসরণের সাথে জড়িত বিভিন্ন অঙ্গ, যেমন- কিডনি, ইউরেটার, মূত্রথলি, প্রোস্টেট ও মূত্রনালী প্রভৃতি এক বা একাধিক অঙ্গে জীবাণুর সংক্রমণকে মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ বলা হয়। ইংরেজিতে যা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা সংক্ষেপে ইউটিআই নামে পরিচিত। আমাদের মোট জংসংখ্যার ১ থেকে ৩ শতাংশ জীবনের কোনো-না-কোনো পর্যায়ে এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়।
কাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি?
সাধারণত যেকোনো বয়সের নারী-পুরুষই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে,
১. ডায়াবেটিস
২. প্রস্রাবের রাস্তায় নল বা ক্যাথেটারের ব্যবহার
৩. মূত্রতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ, যেমন-মূত্রতন্ত্রে পাথরের উপস্থিতি, মূত্রতন্ত্রে মূত্র নিঃসরণে বিপরীত গতি তথা ভেসিকো ইউরেটিরিক রিফ্লাক্স।
৪. স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ, যেমন- মাল্টিপল এসক্লেরোসিস, স্পাইনা বাইফিডা।
৫. পুরুষদের ক্ষেত্রে-প্রোস্টেটের অবাঞ্চিত বৃদ্ধি, প্রোস্টেট ক্যান্সার, মূত্রপথ তথা মূত্রনালীর সঙ্কীর্ণতা।
৬. নারীদের ক্ষেত্রে- জরায়ুর অস্বাভাবিক স্থানচ্যুতি কিংবা রজঃবন্ধ অবস্থা।
প্রভৃতি এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়।
রোগের লক্ষণ:
# প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া।
# ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া।
# প্রস্রাবের পর পুনরায় প্রস্রাবের আকাঙ্খা।
# প্রস্রাবের তীব্র তাড়া।
# তলপেট, উদরের পার্শ্বদেশ বা কুঁচকিতে থেকে থেকে মোচড়ানো বা তীব্র ব্যথা।
# প্রস্রাবের সাথে রক্তক্ষরণ।
# দৃর্গন্ধযুক্ত ও ঘোলাটে প্রস্রাব।
# কাঁপুনিসহ জ্বর, বমি।
# রক্তচাপ কমে যাওয়া।
# তীব্র ব্যথায় পেট শক্ত হয়ে যাওয়া।
# বীর্যপাতের সময় ব্যথা কিংবা পায়ুপথের চার পাশে ব্যথা।
প্রভৃতি এক বা একাধিক লক্ষণ নিয়ে মানবদেহে এই রোগ দেখা দিতে পারে।
রোগ নির্ণয়: সাধারণত রোগের যথাযথ ইতিহাস ও নানা ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার পাশাপাশি প্রস্রাবের জীবানুর উপস্থিতি ও কালচারের মাধ্যমে মানবদেহে এই রোগের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। তা ছাড়া, রোগের কারণ ও জটিলতা নির্ণয়কল্পে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক নানা ল্যাবরেটরি ও রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসা: এই রোগের চিকিৎসায় বর্তমানে বাজারে নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে। তবে এর ব্যবহার অবশ্যই হতে হবে একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক। এছাড়া এ রোগের বিভিন্ন উপসর্গ, যেমন- ব্যথার জন্য ব্যথানাশক কিংবা জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়। সেই সাথে প্রয়োজন হয় প্রচুর পরিমাণ পানি পানের। তা ছাড়া, মানবদেহে এই রোগের পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধকল্পে প্রয়োজন হতে পারে এই রোগের উদ্রেককারী বিভিন্ন সমস্যা, যেমন- ডায়াবেটিস, মূত্রতন্ত্রে পাথর, প্রোস্টেটের অবাঞ্চিত বৃদ্ধি, মূত্রনালীর সঙ্কীর্ণতা প্রভৃতির যথাযথ চিকিৎসা। তাই এ সমস্যায় আক্রান্ত হলে আর দেরি না করে আজই একজন অভিজ্ঞ ইউরোলজিস্ট এর পরামর্শ নিন এবং সুস্থ থাকুন।
প্রতিরোধে করণীয়: ‘প্রতিরোধই প্রতিকারের চেয়ে উত্তম পন্থা’ এ ধারনা মাথায় রেখে এই রোগের প্রতিরোধে নিম্নলিখিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে-
# প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ২ লিটার পানি পান করা।
# দীর্ঘ সময় প্রস্রাব ধরে না রেখে নিয়মিত প্রস্রাবের উদ্রেক পেলে প্রস্রাব করা।
# মূত্রস্থান ও যৌনাঙ্গ নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।
# সম্ভব হলে প্রাপ্যতা সাপেক্ষে মূত্রতন্ত্রে পুনঃপুনঃ সংক্রমণ প্রতিরোধকল্পে ক্রেনবেরি নামক ফলের রস ব্যবহার।
প্রভৃতি যথাযথভাবে অনুসরণ করা যেতে পারে।
ডা: কে.এম. জাহিদুল ইসলাম
এমবিবিএস(ঢাকা), বিসিএস (স্বাস্থ্য)
এমএস (অর্থোপেডিক সার্জারী) অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি হাসপাতাল) ঢাকা।